হেমোরয়েড বা পাইলস কি?
পাইলস, যাকে অর্শ্বরোগও বলা হয়। বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা থাকে, যা প্রয়োজন সাপেক্ষে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় যা আমরা পাইলস নামে জেনে থাকি। যখন পায়ুপথে এসব শিরার সংক্রমণ বা প্রদাহ হয় এবং চাপ পড়ে তখন পাইলস বা হেমোরয়েডসে প্রদাহ হয়। যাকে সাধারণ ভাষায় অর্শরোগ বলা হয়।
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন - ০১৭৪০-৪৮৬১২৩
এটি মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ। পাইলস এর ফলে রক্তনালিগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোন বয়সের মানুষ এ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পাইলস হলে সাধারণত চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়। মলদ্বারের নিচের অংশে গোল আকারে ফুলে উঠে, ফলে যে কোন সময় সেই জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকে। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক।
দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া যাদের মলত্যাগের অকারণে বেগ প্রদানের বদভ্যাস রয়েছে, তারাও এই রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারেন। আসুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই পাইলস কী, পাইলসের লক্ষণ ও চিকিৎসা সহ কিছু তথ্য।
হেমোরয়েড বা পাইলসের প্রকারভেদ -
সাধারণত পাইলস দুই প্রকার হয়ে থাকে -
- অভ্যন্তরীণ পাইলস
- বাহ্যিক পাইলস
অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারে তাদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। এগুলি সাধারণ এবং মলদ্বারের ভিতরে মলদ্বারের খোলার উপরে ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার (সেমি) এর মধ্যে ঘটে।
অভ্যন্তরীণ পাইলস:
অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগ চারটি শ্রেণী বা পর্যায়ের হয় যা প্রোল্যাপের উপর ভিত্তি করে।
- প্রথম পর্যায় - পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে না বা প্রলেপস হয় না।
- দ্বিতীয় পর্যায় - মলমূত্র ত্যাগের পর পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়।
- তৃতীয় পর্যায় - পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং নিজে নিজে ঠিক করতে হয়।
- চতুর্থ পযার্য় - পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয় এবং তা আর নিজে ঠিক হয় না বা করা যায় না।
বাহ্যিক পাইলস:
বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের প্রান্তে ছোট ছোট গলদ গঠন করে। এগুলো প্রায়শই চুলকানিদায়ক এবং বেদনাদায়ক হয়ে থাকে।
হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণ -
পাইলসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে:
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিণ্যে ভোগা
- বার্ধক্যজনিত কারণে ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া
- পুরনো ডায়রিয়া
- মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা
- পারিবারিক ইতিহাস
- আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া
- ভারি মালপত্র বহন করা
- স্থুলতা,
- কায়িক শ্রম কম করা
- গর্ভকালীন সময়ে
- পায়ুপথে যৌনক্রিয়া
- যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস
সর্বোপরি পোর্টাল ভেনাস সিস্টেমে কোনো ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যে কোনো কারণে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোতে চাপের ফলে পাইলস সৃষ্টি হয়।
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন - ০১৭৪০-৪৮৬১২৩
হেমোরয়েড বা পাইলসের লক্ষণ -
পাইলস রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে- পায়ুপথের অন্ত্র বা ভেতরের পাইলস রোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না। অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃঅর্শরোগে পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সঙ্গে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করার টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।
পাইলসের সাধারণ লক্ষণগুলি এখানে:
- পায়ূ অঞ্চলে ব্যথা এবং চুলকানি।
- মল বা মলত্যাগের পর রক্ত।
- মলদ্বারের চারপাশে একটি শক্ত গলদা।
অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগের লক্ষণ:
- মল অতিক্রম করার সময় অতিরিক্ত চাপ বা জ্বালা হতে পারে।
- মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত।
- যদি পাইলস প্রল্যাপস, ব্যথা এবং জ্বালা হয়।
বহিরাগত অর্শ্বরোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি।
- মলদ্বারের কাছে বেদনাদায়ক মাংসল গলদ।
- বসার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি।
- মলদ্বারে রক্তক্ষরণ।
হেমোরয়েড বা পাইলসের ঝুঁকিতে কারা?
হেমোরয়েড বা পাইলস সব বয়সের ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারে, তবে কিছু কারণ এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সমস্যা আছে তারা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে পরে।
যদি আপনি নিশ্চিত না হন যে আপনার পাইলস হয়েছে, আমাদের পাইলস ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ সাথে পরামর্শ করতে অনুগ্রহ করে আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট হেল্পলাইন ব্যবহার করুন।
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন - ০১৭৪০-৪৮৬১২৩
হেমোরয়েড বা পাইলস এর জটিলতা
যদি চিকিত্সা না করা হয় বা অবস্থা গুরুতর হয়ে যায় তবে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। হেমোরয়েডের কিছু সম্ভাব্য জটিলতার মধ্যে রয়েছে:
থ্রম্বোসিস: বাহ্যিক হেমোরয়েডগুলি রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যার ফলে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং প্রদাহ হতে পারে। এই অবস্থা, থ্রম্বোজড হেমোরয়েডস নামে পরিচিত, উপসর্গগুলি উপশম করতে এবং আরও জটিলতা রোধ করতে চিকিৎসার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।
রক্তপাত: হেমোরয়েড রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে মলত্যাগের সময়। যদিও ছোটখাট রক্তপাত এবং সাধারণত নিজে থেকেই সমাধান হয়ে যায়, তবে দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাতের জন্য রক্তশূন্যতা হতে পারে।
প্রল্যাপস: কিছু ক্ষেত্রে, অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড মলদ্বারের বাইরে বের হতে পারে, এই অবস্থাটি প্রল্যাপসড হেমোরয়েডস নামে পরিচিত। প্রল্যাপ্সড হেমোরয়েড অস্বস্তি, জ্বালা এবং অসুবিধার কারণ হতে পারে। গুরুতর প্রল্যাপসের জন্য রাবার ব্যান্ড লাইগেশন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
শ্বাসরোধ: প্রল্যাপ্সড হেমোরয়েড মলদ্বারের বাইরে আটকে যেতে পারে, যার ফলে শ্বাসরোধ হতে পারে এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এটি গুরুতর ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং টিস্যুর ক্ষতির কারণ হতে পারে, লক্ষণগুলি উপশম করতে এবং জটিলতা রোধ করতে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা: ক্রমাগত উপসর্গ যেমন চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি জীবনযাত্রার মান এবং দৈনন্দিন কাজকর্মকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।
সংক্রমণ: ঘামাচি, ঘষা বা বিরক্তিকর হেমোরয়েডগুলি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যার ফলে লালভাব, ফোলাভাব, উষ্ণতা এবং পুঁজ নিষ্কাশনের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
অ্যানিমিয়া: হেমোরয়েডস থেকে দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাতের ফলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা হতে পারে, এমন একটি অবস্থা যা লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম এবং টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস করে। অ্যানিমিয়া ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ত্বক এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
পাইলস এর চিকিৎসা -
পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে অনেকেই চেপে যান প্রথমে, যা অসুখের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় করে প্রক্টোস্কোপির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।
প্রথম পর্যায়ে মলম, ইনজেকশন বা রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের সাহায্যেই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। অসুখের মাত্রা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য শল্যচিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। তবে সব কয়টি ক্ষেত্রেই রোগটি ফিরে আসার শঙ্কা থাকে, যদি না সাবধানে থাকা যায়।
এজন্য বদলে ফেলুন লাইফস্টাইল। পাইলস বা পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো অসুখের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী অনিয়মিত লাইফস্টাইল। এজন্য খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ক্যাফিন জাতীয় পানীয়, তেল-ঝাল মশলাযুক্ত রান্না। পাইলসের রোগীদের পক্ষে শুকনো লঙ্কা বিষতুল্য। ভারী জিনিস তোলাও কিন্তু বারণ।
পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এর চিকিৎসা করা জরুরি। রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের দ্বারা শতকরাই প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রচলিত এই অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি অংশ কাটার প্রয়োজন হয়।
এই অপারেশন শুধু তাদের জন্যই করা হয় যাদের রিং লাইগেশন এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং যারা লংগো অপারেশন করানোর জন্য মেশিন কিনতে অক্ষম।
চলিত অপারেশনের মতই আরেকটি অপারেশন হলো লেজার অপারেশন। পার্থক্য শুধু এটাই যে, লেজার অপারেশনে বিম ব্যবহার করা হয়। এবং প্রচলিত অপারেশনে সার্জিক্যাল নাইফ ব্যবহার করে কাটাকাটির কাজ করা হয়।
চলিত অপারেশনের মতো লেজার অপারেশনে ক্ষত স্থান হবে তিনটি । লেজার অপারেশন ও সাধারণত অপারেশন এর মধ্যে তেমন কিছু তফাৎ নেই কারণ দুটি অপারেশনেই সমান ব্যথা অনুভব করতে হয়। ক্ষত স্থান টি শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে।
পাইলস চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমনঃ– ক্রায়োথেরাপি, ইঞ্জেকশন, আল্ট্রয়েড, লেজার থেরাপি, রিং লাইগেশন ইত্যাদি।
তবে আপনি যদি উপরিউক্ত চিকিৎসাগুলো না করে ঘরোয়া ভাবে এর সমাধান বের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নীচে উল্লিখিত নির্দেশনাগুলো আপনার জন্য।
- পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা পালনে নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
- দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- মল শক্ত হয় এসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। অতিরিক্ত গরুর মাংশ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- পরিমাণ মতো আঁশযুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। পাইলসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে পাইলসের লক্ষণ ধরা দেওয়ার পূর্বে থেকেই এ সকল খাবার খেতে হবে।
- দরকার হলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পাইলস এর ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
- পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসাটি আপনি ঘরে বসেই কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন।
ঢাকায় পাইলস অপারেশন খরচ কত দেখতে এখানে ক্লিক করুন
শেষ কথা -
পায়ুপথের যেকোনো রোগকেই অধিকাংশ মানুষ পাইলস বলে জানে। কিন্তু পায়ুপথের রোগ মানেই পাইলস নয়। পায়ুপথে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ রোগী, বিশেষত নারীরা, এসব সমস্যার কথা গোপন করে রাখেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে দেরি করে ফেলেন।
আবার অনেকেই লজ্জা বা সংকোচের কারণে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে টোটকা ওষুধ, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি গ্রহণ করেন। আর ক্রমশ অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা নিলে অধিকাংশ মানুষ সার্জারি বা অস্ত্রোপচার ছাড়াই হয়তো ভালো হতে পারবেন।
পায়ুপথে সাধারণত ফিসার, ফিস্টুলা, হেমোরয়েড, ফোড়া, প্রোলাপস, রক্ত জমাট, পলিপ বা টিউমার ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সব সমস্যার অন্যতম কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই এ বিষয়ে আগে থেকে সচেতন ও সতর্ক থাকতেই হবে। চিকিৎসা না নিলে এ থেকে কখনো কখনো ক্যানসার বা বড় সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যথাসময়ে এর চিকিৎসা ও সতর্কতা জরুরি।
আরও বিস্তারিত জানতে এবং সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শের জন্য কল করুন - ০১৭৪০৪৮৬১২৩