আমরা প্রায়ই আমাদের ঠোঁটে এক ধরনের ক্ষত দেখতে পাই যাকে আমরা ঠোঁটের ঘা বলে থাকি। অনেকের মাঝে মধ্যে ঠোঁটের দুই কোণে কিংবা এক কোণে ফাটা ঘা হতে দেখা যায়। যদিও এমন ঘা সাধারণত গুরুতর কিছু নয়। জ্বর, সর্দিকাশির পর মুখে একধরনের ঘা হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ রোগের নাম এঙ্গুলার চিলাইটিস। এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এ নিয়ে প্রচুর অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এটা বিব্রতকর, দেখতে খারাপ দেখায়; আবার বেদনাদায়কও হতে পারে। আজকে আমরা জানবো ঠোঁটে ঘা হওয়ার কারণ ও পরিত্রাণের কিছু উপায়।
যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ এই এঙ্গুলার চিলাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারেন । পান, সুপারি, সাদাপাতা বা তামাকের দীর্ঘদিন সেবন, এমনকি মুখে গুল এর ব্যবহারেও হতে পারে এমন সমস্যা। এঙ্গুলার চিলাইটিস রোগটিতে পানমসলা খাওয়ার অভ্যাসেও আক্রান্ত হতে পারেন । বয়স্ক ব্যক্তিরা কেউ কেউ মুখে ডেনচার ব্যবহার করেন বা তাঁদের মুখের কোণে ত্বক ঝুলে যেতে পারে। এ কারণেও ঠোঁটের কোণে ঘা হয়।
মুখে শুষ্কতার কারণে ঠোঁটের কোণে ফেটে যায়। কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক ফাটা অংশে প্রবেশ করে, যা প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া এটোপিক ডার্মাটাইটিস বা অ্যাকজিমা, ডেনচার মুখে সেট না হওয়া, ঘুমন্ত অবস্থায় লালা পড়া, মুখে ছত্রাকের সংক্রমণ, আঁকাবাঁকা দাঁত, ত্বকের অ্যালার্জি, শিশুদের ক্ষেত্রে আঙুল চোষা, এমনকি মুখে দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার কারণেও এ ধরনের ঘা হতে পারে।
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন - ০১৭৪০-৪৮৬১২৩
আপনার যদি ডায়াবেটিস বা অন্ত্রের প্রদাহজনক রোগ থাকে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে, শরীরে ভিটামিন বি, আয়রন বা প্রোটিনের ঘাটতি হলে দ্রুত ওজন হ্রাস বা বার্ধক্যজনিত কারণে, ধূমপান করলে কিংবা অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে এ রোগের ঝুঁকি বাড়বে। এঙ্গুলার চিলাইটিস হলে ঘায়ের সঙ্গে রক্তপাত, ফোসকা, ত্বক ফেটে যাওয়া, খসখসে, লালচে রং, ফোলাভাব ও চুলকানি হতে পারে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ -
এঙ্গুলার চিলাইটিস কী কারণে হয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে আপনার চিকিৎসা। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে বা ত্বকে ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমায়। দাঁতে ডেনচার ঠিকভাবে সেট করা জরুরি। আঁকাবাঁকা দাঁত ঠিক করতে আধুনিক চিকিৎসা নিতে পারেন। পুষ্টির স্বল্পতা থাকলে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন বি-জাতীয় ওষুধ খেতে হবে।
অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা টপিক্যাল স্টেরয়েড ঠোঁটের ফাটা কোণে ফোলাভাব ও ব্যথা উপশম করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে। লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি আপনার ঠোঁটের কোণের ত্বককে আর্দ্র ও সুরক্ষিত রাখবে। এঙ্গুলার চিলাইটিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি ঠোঁটের কোণে বরফ দিতে পারেন। মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ব্যথা, ফোলা ও জ্বালাপোড়া কমবে। রোদ ও খুব ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকুন।
ত্বকের অ্যালার্জি আছে, এমন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান করুন। আপনার ঠোঁট আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন। ধূমপান বা তামাকজাত পণ্য, পান, সুপারি, জর্দা এড়িয়ে চলুন। বারবার ঠোঁট জিব দিয়ে ভেজানোর অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।
ঠোঁটের ঘা সাধারণত গুরুতর হয় না। চিকিৎসা শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসা না করালে ত্বকে দাগ বা ত্বক পাতলা হতে পারে। চিকিৎসার পরও আবার দেখা দিতে পারে রোগটি। কারও ক্ষেত্রে এই ঘা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমনকি সারা জীবন এ অবস্থা চলতে পারে। তাই প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে রোগটি নিয়ন্ত্রিত রাখা।
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন - ০১৭৪০-৪৮৬১২৩
ঠোঁটের ঘা পরিত্রাণে ৬টি ঘরোয়া উপায় -
এক মুঠো তুলসি পাতা, ৪-৮ কাপ পানির মধ্যে তুলসি পাতা দিয়ে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন। এবার পানি ছেকে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে নিন এবং ২ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
একটু নারকেল তেল পরিস্কার আঙ্গুলে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগান। আপনি ইচ্ছা করলে এর সাথে সামান্য মোম মিক্স করে লাগাতে পারেন।
অলিভ অয়েল হাফ চা চামচ, লবঙ্গ গুঁড়া ১ টি, কটন বল, গরম পানি। প্রথমে ক্ষত স্থানে গরম পানির ভাব নিন। এরপর লবঙ্গ এবং অলিভ অয়েল একত্রে হাল্কা গরম করে ঠাণ্ডা করে কটন বলে তেল নিয়ে ৫ মিনিট ক্ষত স্থানে লাগিয়ে নিন।
আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে মধুতে এন্টি ব্যাকটেরিয়া থাকে। দিনে কমপক্ষে ৩ বার ক্ষত স্থানে মধু লাগান। এতে খুব তাড়াতাড়ি কাজ হয়।
১ টেবিল চামচ অ্যালভেরা জেল, ১ টেবিল চামচ পানি। দুটি উপাদান ভালভাবে মিক্স করে দিনে ৩ বার ক্ষত স্থানে লাগান। এতে ব্যথা এবং জ্বালা ভাব কমে যাবে।
১/৪ কাপ গরম পানি, ১/২ চা চামচ লবণ। এটি ভালোভাবে মিক্স করে দিনে ২ বার ক্ষত স্থানে লাগান যতক্ষণ পর্যন্ত সেরে না যায়।
ক্ষত সারানোর জন্য উপরের উপাদানগুলো ট্রাই করুন। ক্ষত থাকা কালীন এসিডিক খাবার না খাওয়াই ভাল। ফ্রেশ টক দই খেতে পারেন। ক্ষতে বেশি হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরোও বিস্তারিত জানতে এবং সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যোগাযোগ করুন - ০১৭৪০-৪৮৬১২৩